আল্লাহর খলিফা ইমাম মাহদী’কে চেনার লক্ষ্মণগুলো কি কি? ওনার আগমনী মূহুর্তে বিশ্বের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কিরূপ থাকবে? কিতাবুল ফিতানের একটি হাদিসে দেখেছি, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন: বরফের পাহাড়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উনার কাফেলায় যুক্ত হতে বলেছেন। ঐ সময়টা কি সন্নিকটে? এই হাদিসের মান কেমন?
ইমাম মাহদির নাম হবে মুহাম্মাদ এবং তিনি রসূল (সঃ) এর বংশের হবেন। পূর্ব থেকেই তিনি জিহাদী কাফেলায় শরীক থাকবেন। কোনো কারণে তাদের সাথে মতানৈক্য হওয়ার পর তিনি তাদেঁর কাছ থেকে মক্কায় চলে যাবেন।
বাইদার ভূমি ধ্বংসের পর আল্লাহ উনাকে এক রাতেই এই মহান দায়িত্বের জন্য ঐ তৈরী করবেন। কা’বার কাছে থাকতেই লোকজন উনাকে চিনে ফেলবে আর উনার কাছে বাইআতের জন্য তারা পীড়াপিড়ি করবে। প্রথমত, তিনি লোকদের বাইআত নিতে অস্বীকার করবেন। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আওয়াজ দেওয়া হবে –
هذا خَلِيفَةُ الله المهدي
ইনিই আল্লাহর খলীফাহ মাহদী, অবশেষে তিনি জিহাদের দায়িত্ব নিবেন এবং উনার নেতৃত্বেই জিহাদ পরিচালিত হবে।
“বরফের পাহাড়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাঁর (মাহদির) কাছে পৌঁছে তাঁর সঙ্গে যোগ দাও” — এই কথাটি সাধারণত ইমাম মাহদি (আঃ)-এর প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়।
এই বর্ণনাটির উৎসমূল ও মান :
এই হাদিসটি পাওয়া যায় ইবন মাজাহ-এর সুনান গ্রন্থে,
কিতাবুল ফিতান, باب خروج المهدي,
হাদিস নম্বর: 4084 (কিছু সংস্করণে 4082)।
আরবিতে বর্ণনাটি হলো:
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ
“يَقْتَتِلُ عِندَ كَنْزِكُمْ ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمُ ابْنُ خَلِيفَةٍ، ثُمَّ لَا يَصِيرُ إِلَى وَاحِدٍ مِنْهُمْ، ثُمَّ تَطْلُعُ الرَّايَاتُ السُّودُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ، فَيَقْتُلُونَكُمْ قَتْلًا لَمْ يُقْتَلْهُ قَوْمٌ – ثُمَّ ذَكَرَ شَيْئًا لَا أَحْفَظُهُ – فَقَالَ: فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ، فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللَّهِ الْمَهْدِيُّ”
“তোমাদের ধনভাণ্ডারের জন্য তিনজন খলিফার পুত্র যুদ্ধ করবে… তারপর পূর্ব দিক থেকে কালো পতাকাধারীরা আসবে… তারপর নবী ﷺ বললেন: ‘যদি তোমরা তাঁকে (মাহদিকে) দেখতে পাও, তবে বরফের ওপর হামাগুড়ি দিয়েও তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর হাতে বায়আত করো, কারণ তিনি আল্লাহর খলিফা মাহদি।”
হাদিসের মান (দুর্বল বা সহীহ?)
কেউ কেউ এই হাদীসের রাবিকে সত্যবাদী বলেছেন। আবার কেউ কেউ কোন কোন রাবির দুর্বলতা তুলে ধরেছেন।
ইবন হাজর, আলবানী, শু’আইব আল-আর্নাউত প্রমুখ হাদিস সমালোচকরা বলেছেন —
সনদে থাকা ‘আলী ইবন যায়েদ ইবন জুদআন’ দুর্বল বর্ণনাকারী, ফলে হাদিসটি দুর্বল।
🔹 শায়খ আলবানী (সিলসিলা আল-আহাদিস আল-দাইফাহ, হাদিস ৮৫) একে দুর্বল বলেছেন।
🔹 শু’আইব আল-আর্নাউত (তাহকীক, সুনান ইবন মাজাহ) মন্তব্য করেছেন: “إسناده ضعيف” — “এর সনদ দুর্বল।”
তবে অর্থগতভাবে (মাতন) হাদিসটির ভাব সহীহ,
যদিও সনদ দুর্বল, তবুও বিষয়বস্তু ইমাম মাহদি সম্পর্কে অন্যান্য সহীহ হাদিসের সাথে মিল রাখে— যেমন মাহদির আগমন, পূর্ব দিক থেকে কালো পতাকাবাহী বাহিনী ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক সহীহ হাদিস রয়েছে (যেমন: মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি ইত্যাদিতে)।
তবে “বরফের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে যাও”— অংশটি বিশেষভাবে দুর্বল সূত্রে এসেছে।
বর্তমান পৃথিবীর অবস্থা দেখে মনে হয় ইমাম মাহদির আগমন সন্নিকটে। কারণ হাদিসে বর্ণিত কিয়ামতের ছোট ছোট আলামতগুলো প্রায় প্রকাশিত হয়ে গেছে। আর কিয়ামতের বড় আলামত ইমাম মাহদির আত্ম প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হবে।والله أعلم